Monday, 12 September 2016

দলিত-বহুজন স্বাধিকার আন্দোলন কয়েকটি জরুরী কথা Saradindu Uddipan

দলিত-বহুজন স্বাধিকার আন্দোলন
কয়েকটি জরুরী কথা
Saradindu Uddipan
ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হলেই সে ব্রাহ্মণ্যবাদী এরকম একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে দলিত, শোষিত, নিপীড়িতদের মুক্তিকামী কিছু নেতা নেত্রীদের। এই ধারণাকে আমি অগ্রাহ্য করছি না বরং ধারনাটি যে একটি দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল এবং এর প্রভাবে যে একটি সামাজিক জড়ত্ব তৈরি হয়েছে তা মেনে নিচ্ছ।
আমার মনে হয় ব্রাহ্মন্যবাদ একটি রাজনৈতিক দর্শন যার মধ্য দিয়ে মুস্টিমেয় শ্রমবিমুখ মানুষ ক্ষমতার উচ্চ কক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মন্যবাদ চতুর্বর্ণের আঁতুড় ঘর যেখান থেকে জন্মসূত্রে ক্ষমতা ও কর্মের বিভাজন ঘটে। জাত-পাত, স্পৃশ্য- অস্পৃশ্য ব্রাহ্মন্যবাদেরি বাই প্রোডাক্ট। সাম-দাম-দণ্ড-ভেদ ব্রাহ্মন্যবাদের নিরন্তর কর্মসূচী। ব্রাহ্মন্যবাদ ধর্মীয় আবেগের দ্বারা জারিত যা মানুষকে দৈব দাসে পরিণত করে।
ব্রাহ্মন্যবাদ নামাক প্রগতির পরিপন্থী এই শোষণ যন্ত্রকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবার জন্য যারা আমৃত্যু সংগ্রাম করে চলেছেন তারা ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ব্রাহ্মণ নন। কেননা ব্রাহ্মণ হতে হলে ব্রাহ্মন্যবাদ বিকাশ বা বিস্তারের শপথ নিতে হায়।
আমরা দলিত, শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিতদের স্বাধিকার আন্দোলনে ব্রাহ্মণকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দাঁড় করাতে গিয়ে অবহেলা করছি আর একটি চরম বাস্তবতা, যা ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস করার ক্ষেত্রে প্রবল বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বহুজন সমাজের একটি বৃহৎ অংশই এই বাঁধা গড়ে তুলেছে। বহুজন সমাজের এই অংশ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মানো ব্রাহ্মণ সন্তানের থেকেও কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী। এই অংশই ব্রাহ্মণ্যবাদ নামক বিষবৃক্ষের লালন, পালন করে এর বিষক্রিয়াকে বাড়িয়ে তুলছে।
অন্য দিকে দলিত-বহুজন আন্দোলনের স্বরূপ, ব্যাপকতা এবং বাস্তবতা নিয়ে অনেকের ধারণাও স্পষ্ট নয়। "দলিত" এবং "বহুজন" শব্দের প্রকৃত মানে এবং উদ্দেশ্য নিয়েও অনেকের ধারণা স্বচ্ছ নয়। অনেকে "দলিত" শব্দটাকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেকে আবার দলিত শব্দ দ্বারা কেবল মাত্র অস্পৃশ্য সমাজকে বোঝান হচ্ছে, এরকম মনে করছেন। আমার মনে হয়েছে এই ধারনার মূলে রয়েছে সীমাহীন অজ্ঞতা ও ভাষাতত্ত্বিক জ্ঞানের অভাব। এরা "দলিত" শ্রেণী তত্ত্ব নিয়ে জ্যোতি রাও ফুলে, গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং বাবা সাহেবের ভাষ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে শুরু করছেন। এদের একাংশ বলছেন যে, সমাজের বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিজেদের দলিত মনে করছি কেন? তাছাড়া দলিত শব্দ নাকি "পদ দ্বারা দলিত" অংশকে চিহ্নিত করে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণের পায়ের নীচে পড়ে থাকার অমর্যাদাকে তারা মেনে নিতে রাজি নয়। দলতি শব্দ নাকি তাদের অস্তিত্ব এবং আভিজাত্যকে আহত করে !!!! বেশ বেশ......
আমার প্রশ্ন ঃ
আপনি কি মনে করেন ৮৫+৭ = ৯২ (এসসি/এসটি, ওবিসি + সবর্ণ সমাজের নারী) শতাংশ মানুষ এখনো ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বারা নিষ্পেষিত?
আপনি কি মনে করেন এই ৯২% মানুষ নানা কারণে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত?
আপনি কি মনে করেন এই মানুষগুলি রাষ্ট্রীয় পরিষেবা থেকে বহিষ্কৃত?
যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয় তবে এই মানুষগুলিকে "Depressed Class" বলতে আপানার আপত্তি নেই তো?
এই শোষিত শ্রেণীর মানুষকেই জ্যোতিরাও ফুলে "দলিত" হিসেবেই চিহ্নিত করেছিলেন।
বাবা সাহেব আম্বেদকর তার বহিষ্কৃত ভারতে জ্যোতিরাও ফুলের এই দলিত শব্দ মেনে নিয়ে তার সংজ্ঞা নিরূপণ করেছিলেন এবং ভারতীয় রাজনীতিতে ব্রাহ্মন্যবাদ ও জাতপাত ধ্বংস করে এক মহামিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি বলছেন, “….dalithood is a kind of life condition which characterize the exploitation , suppression and marginalization of Dalits by the social, economic, cultural and political domination of the upper castes”.
মহামানব গুরুচাঁদ ঠাকুর দলিতদের আপনজন বলে সম্বোধন করেছিলেন।
মান্যবর কাশীরামজী দলিত-শোষিত এবং বহুজন শব্দকে নিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। নির্দ্বিধায় বলা যায় যে ভারতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে "দলিত-বহুজন" শব্দ দুটির একটি বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে জাত-পাতের বিভাজন থেকে মুক্ত করে শ্রেণীতে উন্নীত করছে।
দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, দলিত-বহুজনের আন্দোলনকে জাতপাতের আন্দোলন হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে কিছু ব্রাহ্মন্যবাদী দালাল। এরা সংঘ পরিবারের টাকায় পুষ্ট স্বঘোষিত নেতা। এদের কথাবার্তা, শব্দ চয়ন এবং প্রকাশ ভঙ্গী এবং কর্মসূচী দেখলেই বুঝতে পারবেন এরা কী চায়।
আশার কথা মানুষ অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে এবং দলিত-বহুজনের স্বার্থেই একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রবল তাগিদ অনুভব করছে। বিশ্বাস রাখি নিশ্চিত ভাবেই সারা ভারতবর্ষের সাথে এই বংলাতেও দালাল-চামচা সমেত ব্রাহ্মন্যবাদ ধ্বংস হবে।
জয় ভীম, জয় ভারত

No comments:

Post a Comment