Sunday, August 16, 2015
ঢ্যামনামিতে কাইট্যা গেলো জীবনডা!
জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
মুসলামানরা আমাদের স্বজন হলে ত দেশটাই ভাগ হয়না.
সেই ঐতিহাসিক ভূল তবু বারম্বার,দেশভাগ চলছেই.
সবকিছু পাল্টাতেই হয়,জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ আমাদের কখনো বাঙাল বলে গাল দেইনি.
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ কখনো বলে নি,ছোট লোক,জাত বেজাত.
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ কখনো বলে নি,ব্যাটা চাঁড়াল পোদ.
পলাশ বিশ্বাস
তারাশন্করের কবির গান মনে পড়ে?
বসনের মৃত্যু যখন নিশ্চিত,তখন কবির কন্ঠের সেই গান,আজ আর ঠিক ঠিক মনে নেই.
তখনও স্কুলের গন্ডী পেরোয় নি.তারাশ্নকর অনবাদ হয়ে নৈনীতালের উদ্বাস্তু জীবনে উদ্বাস্তু হয়ে ভেসে এসিছিলো,অথচ আমাদের নদী বলতে গ্রামের পাশে পাহাড়ী ছোট্ট একটি অনাম নদী,বরষাযভরা কূল.নল খাগড়া বন ঔর কখনো কখনো বাঘের ডেরা.
সবাই ত নমো অথবা পোদ.পোদ বললেই মার দাঙ্গা.পৌন্ড্রক্ষত্রিয় বলতে হত.আমাদের গ্রামে ওরাঁই বেশী ,নমো বলতে আমরা পাঁচ কি ছ ঘর.
তাই অশ্পৃশ্যতা বলতে কি জিনিষ বোঝার সুযোগ ঔ উদ্বাস্তু উপনিবেশে হয়নি.অবাঙালিরা উঁচু জাতের হলেও,তাঁদের চোখে আমরা তখন নেতাজি,রবীন্দ্রনাথ,স্বামীজির বংশধর.তখনো আমরা বাঙালি.
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ আমাদের কখনো বাঙাল বলে গাল দেইনি.
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ কখনো বলে নি,ছোট লোক,জাত বেজাত.
উদ্বাস্তু উপনিবেশে কেউ কখনো বলে নি,ব্যাটা চাঁড়াল পোদ.
অন্ত্যজ জীবনের মর্ম পশ্চিমবঙ্গে বসবাসের আগে কোনোদিন হয়নি.
তাই যেমন দেবদাস মন উথাল পাথাল করেছিল হিন্দী অনুবাদে,তেমনিই কবিও উতলা করেছিল.বাংলায় তখন বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ, বন্কিম, নজরুল ও অন্নান্যরা.
শরতের শুধু শ্রীকান্ত পড়া হয়েছিল ছোটকাকার দৌলতে.
শরতের বাকী লেখা তখন হিন্দিতেই পড়তে হয়েছিল,বড়দের সাহিত্য তখনো বাংলায় হাতের মুঠোয় আসেনি.দেখাও হয়নি.
ঘটনাচক্রে কবি আর কোনো দিন বাংলায় পড়া হল না.
গানখানা কি যে ছিল মনে নেই,তবে তাঁর মরম মরমে বিঁধে ছিল সেই প্রথম দিন যেমন তেমনিই বিঁধে আছে এখনো.
নৈনীতালে যেতেই গুরুজি তারাচন্দ্র ত্রিপাঠি ফতোয়া দিলেন,ভারতের সব উপন্যাস একদিকে তারাশন্করের গণদেবতা এবং শন্করের চৌরঙগী একদিকে.
সেই তবে থেকে তারাশন্করে অনুসন্ধান গণদেবতার হাত ধরে শুরু.শন্কর সুপাঠ্য হলেও সমাজবাস্তবের নিরিখে তাঁকে খারিজ করেছিলাম বিএ পাশ করতে না করতেই.
তারাশন্করকে আঁকড়ে ধরেছিলাম যেহেতু শরতকেও এমএ পাশ করতে না করতে রদ করে দিয়ে মাণিক ও মহাশ্বেতাদিকে ধরেছিলাম.
শেষপর্যন্ত ইলিয়াসে,নবারুণেই তেকে গেলাম.
তখনো বাংলাদেশের কারো লেখা পড়িনি.সৈয়দ মুস্তফা আলির নাম বাংলায় এসেই শুনলা ও পড়লাম.
তবে বাসন্তীপুরেই আশ্চর্যজনক ভাবে হাতে এসিছিল বিষাদে সিন্ধু.সেই কবি পড়ার সময়.সেই শ্রীকান্ত হয়ে ওটার সময়.শিব্রামের সব লেখা বাংলাতেই পড়েছি ঔ সময়.শুধু বাড়ি থেকে পালাতে পারিনি.
বাংলাদেশের লেখা ইলিয়াস থেখে যেই না শুরু করলাম সবার আগে ত্যাগ করলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,অতীন বন্দোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে.প্রফুল্ল রায়কে আর ত্যাগ করতে পারলাম না.
বাংলার সমাজ জীবনে আত্মস্থ হতে না হতে যখন বুঝলাম নমো আর পোদ আসলে কি জিনিষ,অশ্পৃশ্যতা কারে কয়,তখন বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম,তোমরা শুধু ধর্মের জন্য দেশভাগ মেনে নিলে,ধর্মের জন্য দেশছাডা় হলে তোমরা?ধর্ম তোমাদের অবস্থান কি?
বাবা যগেন মন্ডলের অনুগামী ছিলেন যেমন তেমনই বাবা কম্যুনিস্টছেলেন তেভাগা থেকে রিফুইজি আন্দোলন ,ঢিমরি ব্লক কৃষক আন্দোলনেও ছিলেন এবং আম্বেডকরও তাঁর কাছে একমাত্র ভগবান,অথচ তিনি নাস্তিক না হলেও আস্তিকও ছিলেন না.
দেশভাগের বলি বলে লেখাপড়া হয়নি বাবার তাই আমাদের মত মতাদর্শের বাহাসে তিনি ছিলেন না.
সব প্রশ্নের জবাবে বলতেন,এই ছন্নছাডা় উদ্বাস্তুরাই আমাদের স্বজন.
ওদের জন্য যা কিছু করার ,আমাদের করতে হবে.
আমাদের অন্য স্বজন নেই.
আমাদের বাংলা নেই.
আমরা বাংলার ইতিহাসে নেই,বাংলার ভূগোলেও আমরা নেই.
আমরা অন্ত্যজ.
আমি বলতাম,অন্ত্যজ আবার কি,আমরা ত সর্বহারা.
অন্ত্যজই ছিলাম ও এখনো অন্ত্যজই হয়ে আছি.
আমার ঠাকুমা কেঁদে কেঁদে বলতেন-কি পোড়া দ্যাশে ফ্যালছে শালারা,না আছে কোনো নদী,না আছি তাল নারকেল সুপারি.নারকোল বাংলায় এসে জানলাম.
তখন ও সুন্দরবনের শোক ভুলে নৈনীতালের অরণ্যে বনবিবিব পুজো চলত.বারোয়ারি ছিল রক্ষাকালি,মনসা ও শেতলার পুজো.
তখনও দুর্গাপুজোর অসুরকে জানার কথা ছিল না,যেমন থক সত্যজিত রাযের নামও শুনিনি.অথচ তখনও উপেন্দ্র কিশোর ও সুকুমার রায় গিলে খেতাম.
সত্যজিতের দুর্গা ও বিভুতি ভুষণের দুর্গা আমাকে তেমনিই টানেনি কোনোদিন,যেমন ভারতমাতা বন্দেমাতরমে নিমগ্ন দেবি দুর্গা আমার দেবি হয়নি কখনো.আরণ্যকে ভালোবেসেছি বিভুতিকে.
আজ বাবা গত হয়েছেন চোদ্দো বছর হল.স্বজনদের প্রাণে আঘাত পড়েনি,শুধু মেরুদন্ডে ক্যান্সার হয়েছিল,কাউকে কোনো দিন জানতে দেননি,ক্যান্সার বহন করেও একা একা স্বজনসেবা করে গত হয়েছেন বাবা.স্বজনরা তাঁকে মনেও রাখেননি.
আমারও সময় যায় যায়.
তাই ঔ গানই মনে পড়ে বার বার যেহেতু রীতিমত ঢ্যামনামি করে জীবনডা কাইট্যা গেল.
ফণা ত জুটলই না,দংশণের দাঁতও নেই.
তবু ত ফণা তুলেই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম.
জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
বাবা বেঁচে থাকলে,আজ জিজ্ঞাসা করার ছিল,স্বজন বলতে কি শুধু হিন্দু?
অস্পৃশ্য যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে হিন্দুত্বের অত্যাচারে,উত্পীড়ণ নিপীড়নে,তাঁরা আমাদের কি হয়?
বাবা বেঁচে থাকলে,আজ জিজ্ঞাসা করার ছিল,ঔ স্বজনদের সঙ্গে আমাদের কতটুকু ভাব ভালোবাসা ছিল যে নেড়ে দেখলেই,তার মাথায় জুতো মারতে হত?
আমরাও সেই প্রজাজন ছিলাম,তাঁরাও তেমনি প্রজাজন ছিল তবু নায়েবের হাতে কালিমার ফুল নিয়ে কেন হল সোজন বেদিয়ার ঘাট,বাবা বেঁচে থাকলে,আজ জিজ্ঞাসা করার ছিল.
বাবা বেঁচে থাকলে,আজ জিজ্ঞাসা করার ছিল,পদ্মবিলের কাজিয়াতে ঠিক কি হয়েছিল,কেন হয়েছিল.
কেন জসিমকে লিখতে হল নক্সি কাঁথার মাঠ.
কেন জসিমকে লিখতেই হল সোজন বেদিয়ার ঘাট.
আমরা অশ্পৃশ্যছিলাম দুই বাংলাতেই,এখনো আমরা সেই অশ্পৃশ্য অন্ত্যজই আছি.ভোট ছাড়া আজও আমাদের ভিটে নেই কোথাও.
তবু অস্পৃশ্য হয়েও মুসলমান স্বজনদের অস্পৃশ্য করে রেখে দেশ ভাগের বলি কেন হতে হল দুই বাংলাকেই,বাবা বেঁচে থাকলে,আজ জিজ্ঞাসা করার ছিল.
দেশভাগের গল্প যারা লিখে বিখ্যাত অমর বাংলা সাহিত্যে,তাঁদের ছত্র ছত্রে যে ঘৃণা ,তীব্র অপমানে দহন চিরকাল,সেই ঘৃণা তারাশন্করের অন্ত্যজ কাহিনীতে যেমন তেমনিই বর্ণ জাতি আধিপাত্যের সাহিত্য সংস্কৃতির আঙিণায় সর্বত্র.
তাই আজ মনে হয় ইতিহাস পালটাতে হলে আরও আরও বেঁচে থাকা প্রযোজন.
ঢ্যামনামিতে কাইট্যা গেলো জীবনডা!
জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
ছোট বেলাতেই ঠিক করে ছিলাম শহীদ আমি হতে চাইনা.
ছোট বেলাতেই ঠিক করে ছিলাম,অমর আমি হতে চাইনা.
ছোট বেলাতেই ঠিক করে ছিলাম,আমাকে বাঁচতে হবে.
যেহেতু বাবার ঔ কাথাটি আমার কখনো ভূল মনে হয়নি,
উদ্বাস্তু ছন্নছাড়া যারাই এই পৃথীবীতে সবাই স্বজন,
সেই স্বজনদের জন্য যা কিছু করার আমাকেই করতে হবে.
প্রয়োজন হলে ইতিহাস ও নূতন করে লিখতে হবে.
প্রয়োজন হলে ভূগোলটাকেও উলটে পালটে দিকতে হবে.
মুসলামানরা আমাদের স্বজন হলে ত দেশটাই ভাগ হয়না.
সেই ঐতিহাসিক বূল তবু বারম্বার,দশভাগ চলছেই.
সবকিছু পাল্টাতেই হয়,জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
ঢ্যামনামিতে কাইট্যা গেলো জীবনডা!
জীবনডা এত্তো ছোট ক্যানে?
No comments:
Post a Comment