Monday, 18 July 2016

(অরিজিনালটা এটা) সন্ত্রাসীদের আর কিছু নেই ধর্ম ছাড়া Taslima Nasreen

(অরিজিনালটা এটা)
সন্ত্রাসীদের আর কিছু নেই ধর্ম ছাড়া
Taslima Nasreen

বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিশ্ব কাঁপাতে চেয়েছিল, কাঁপিয়েছে। অমুসলমানদের খুন করে পুণ্যি কামাতে চেয়েছিল, সম্ভবত তাও কামিয়েছে। এতগুলো মানুষকে অল্প বয়সী ছেলেগুলো কী করে পারলো জবাই করতে! ওরা তো আগে কখনও জবাই করেনি। সত্যি কথা কী, বিশ্বাস মানুষকে দিয়ে অসম্ভব অসম্ভব কাজ করিয়ে নিতে পারে। ওদের মগজধোলাই কে বা কারা করেছে আমি জানি না, তবে এটা জানি, যে তথ্যই ওদের মস্তিস্কে ঢোকানো হয়েছে, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ওরা সেটা বিশ্বাস করেছে। ধর্ম সত্য, ধর্মগ্রন্থ সত্য, ধর্মগ্রন্থ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা লিখেছেন, তাই যা কিছুই ওতে লেখা আছে, অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে হবে, কোনো প্রশ্ন নয়, শুধু মেনে নেওয়া। সুতরাং ধর্মগ্রন্থের শুরু থেকে শেষ অব্দি সবকিছুকে ওরা নাক চোখ মুখ বুজে আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করেছে। অ বলতে আসলে অ বোঝানো হয়নি, ভ বোঝানো হয়েছে --- এই চালাকি করে প্রাচীনকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করেনি। ‘অবিশ্বাসীদের মারো’ বললে ‘অবিশ্বাসীদের মারো’-ই বুঝেছে, অন্য কিছু বোঝেনি।
ধর্মান্ধ সমাজে মানুষের মগজধোলাই শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। তখন থেকেই তারা ধর্মের গুণগান শোনে ঘরে বাইরে, ইস্কুলে কলেজে, মাঠে ঘাটে, ট্রেনে বাসে, টেলিভিশনে রেডিওয়, সিনেমায় নাটকে। শোনে ধর্ম মেনে চললে চমৎকার বেহেস্ত মেলে, না মানলে জ্বলতে হয় দোযখের বিভৎস আগুনে, ধর্মগ্রন্থে আছে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান, ধর্মই জ্ঞান, ধর্মই বিজ্ঞান, ধর্মই শান্তি। সবসময় তুমি যদি কিছু শুনতে থাকো, ধরো মিথ্যে কিছুই, সেটিও অবচেতনে মগজে ঢুকে যায়। মাটিটা তৈরি হয়ে থাকে অল্প বয়সেই, তার ওপর বিশ্বাসের প্রাসাদ যে কোনো সময় খুব সহজেই বানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

জঙ্গিরা কয়েক বছর হলো নাস্তিক, সেকুলার, যুক্তিবাদি লেখক ব্লগার, সমকামী, প্রগতিশীল ছাত্র শিক্ষক, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানকে কুপিয়ে মারছে, কোনো মৃত্যুতেই শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেননি, কোনো খুনেরই বিচার করেননি, কাউকে গ্রেফতার করেননি, কাউকে শাস্তি দেন নি। উল্টে শাস্তি দিয়েছেন নাস্তিক ব্লগারদের। ধরে ধরে ওদের জেলে পুরেছেন। ভাষণ দিয়েছেন মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে। মুক্তচিন্তা নাকি একটা ফ্যাশান, মুক্তচিন্তকরা নাকি পর্ন লেখেন। নতুন আইন বানানো হয়েছে মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে। মুক্তচিন্তকদের হত্যার জন্য মুক্তচিন্তকদেরই দায়ি করা হয়েছে। আজ ঢাকা ক্যাফের মৃতদের জন্য হঠাৎ দেশের প্রধানমন্ত্রী কেন শোক প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলেন? নিশ্চই বড় কোনো রাজনীতি আছে এর পেছনে। ঢাকা ক্যাফেয় সেদিন যাদের কুপিয়ে মারা হয়েছে, তারা ধনী এবং প্রভাবশালী লোকের সন্তান—এ কারণে? নাকি শহরে সন্ত্রাসী হামলার পর সরকার কী করছেন না করছেন দুনিয়া দেখছে বলে?

রাজনীতিকরা হিপোক্রেট। ধর্মের যেটুকু মানলে সুবিধে হয় শুধু সেটুকু মানবো, বাকিটুকু মানবো না –এই মানসিকতার মুসলামগুলোও হিপোক্রেট। বরং ওই জঙ্গিগুলোই হিপোক্রেট ছিল না। আল্লাহ বলেছেন কোরানের সব বিশ্বাস করতে। তারা তাই সব বিশ্বাস করেছে। সবটুকু গ্রহণ করেছে, সবটুকু মধু, সবটুকু গরল। নিজের জীবনের মায়াটুকু করেনি, মরবে জেনেই এসেছিলো সে-রাতে, বেহেস্তে যাচ্ছে বলে বিশ্বাস করেছে। কেউ তাদের শিখিয়েছে, যে, অমুসলিমদের খুন করলে জিহাদের সওয়াব পাওয়া যায়, সর্বোচ্চ বেহেস্তে জায়গা হয়। অমুসলিমদের কুপিয়ে, হিজাব পরেনি বলে দুটো মুসলমান মেয়েকে কুপিয়ে, বর্বরতার চূড়ান্ত করে, সকাল হলে কিছু দিশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে, যারা কোরানের সুরা মুখস্ত বলতে পেরেছে, বলেছে -- ‘আমরা এখানে শুধু অমুসলিমদের মারতে এসেছি। তোমাদের মারবো না। তোমরা চলে যেতে পারো। আমরা তো বেহেস্তে যাচ্ছি’।
মনে মনে ওরা বেহেস্তে গিয়েছে হয়ত। বাস্তবটা অন্যরকম। পুলিশের গুলি খেয়ে ওখানেই ওরা মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল। সন্ত্রাসের এখানেই কিন্তু যবনিকা পতন নয়! সন্ত্রাসীদের মেরে সন্ত্রাস নির্মূল করা যায় না। সন্ত্রাসের উৎসকে নির্মূল করলেই সন্ত্রাস নির্মূল হয়।

লোকে বলে কোরানের অপব্যাখ্যা মানুষকে বিপথগামী করছে, জঙ্গি বানাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, বাইবেল, গীতা, তোরাহ, ত্রিপিটকও তো ধর্মগ্রন্থ। এগুলোরও তো অপব্যাখ্যা হয়। কিন্তু সেই অপব্যাখ্যা মানুষকে জঙ্গি বানাচ্ছে না কেন? প্রশ্নটির উত্তর খুব বেশি কেউ দিতে চায় না।
আমার প্রশ্নের শেষ নেই। সব ধর্মের সমালোচনা করা যায়, কেন ইসলামের সমালোচনা নৈব নৈব চ? কোনো কিছুকে কি সমালোচনার উর্ধে রাখা উচিত? সমালোচনার উর্ধে রাখলে কি শেষ পর্যন্ত আমাদের তরুণদেরই বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় না? তরুণরা যারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়, তারা এক মতের বাইরে ভিন্ন কোনো মত জানতে পারছে না। তাদের মাথায় দিনরাত চারদিকের প্রচারযন্ত্র এক বার্তাই ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে কোরানের প্রতিটি অক্ষর সত্য, প্রতিটি সহি হাদিস প্রতিটি মুসলমানকে মেনে চলতে হবে। মুক্তচিন্তার স্থান ইসলামের জগতে নেই। যে সব ধর্মীয় গোষ্ঠী মুক্তচিন্তার আবহাওয়া তৈরি করেছে তাদের সমাজে, তারাই সভ্যতার সংস্পর্শে এসেছে। মুক্তচিন্তার চর্চা ছিল বলেই তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে ভেবেছে, এসবকে ধর্মীয় আদেশ উপদেশের অনেক ওপরে স্থান দিয়েছে। তাদের আইনে, সংবিধানে ধর্মতন্ত্র নেই, আছে গণতন্ত্র। তারা কিন্তু ধর্মকে ছুড়ে ফেলেনি, ধর্ম মানার অধিকার তাদের পুরোটাই আছে। তবে ধর্ম বিশ্বাস করা ব্যক্তির কাজ, রাষ্ট্রের কাজ নয়-- এটা শুরু থেকেই পরিষ্কার করে নিয়েছে ওরা। আমরা ওদের ভাল দিকগুলো নিচ্ছি না কেন? একটা সচেতন শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলছি না কেন? কেন ধর্মান্ধ বানাচ্ছি আমাদের ছেলেমেয়েদের! বিজ্ঞানও পড়ছে তারা, ধর্মেও ঝুঁকছে । বিজ্ঞানের চেয়ে ধর্মকে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। ধর্ম সব সমস্যার সোজা উত্তর দেয়, বিজ্ঞান কঠিন উত্তর দেয়। ধর্ম বুঝতে যত সহজ, বিজ্ঞান বুঝতে তত সহজ নয়। সেই কারণেই ধর্মকে বিজ্ঞানের চেয়েও বেশি পছন্দ মানুষের। মগজধোলাই করে ধার্মিক, ধর্মান্ধ, মৌলবাদি,মায় সন্ত্রাসী বানাবার লোক অনেক আছে, মগজধোলাই করে মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক বানাবার কিন্তু বেশি কেউ নেই।
বিজ্ঞানটা অধিকাংশ তরুণ পড়ছে ভাল চাকরি বাকরি পাওয়ার জন্য। বিজ্ঞানের বিগ ব্যাং বা বিবর্তন বিশ্বাস করার জন্য নয়। যে জিনিসে বিশ্বাস করার জন্য তাদের অভিভাবক বলছে, পাড়ার গুরুজন বলছে, স্কুল কলেজের শিক্ষক বলছে, ডাক্তার বলছে, বন্ধুবান্ধব বলছে, শুভাকাংখী বলছে, সরকার বলছে, রেডিও টেলিভিশন বলছে – সে বিজ্ঞান নয়, সে ধর্ম। তাই তরুণরা ধর্মকে আঁকড়ে ধরেছে। যে সন্ত্রাসীগুলোকে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা সবাই ধার্মিক, তারা ধর্মের জন্য জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কী করে দোষ দেব? তাদের কি আমরা মুক্তচিন্তার কোনো পরিবেশ দিয়েছি? প্রশ্ন উঠতে পারে, অন্য আরো তরুণ তো ধর্মকর্ম করছে, কই তারা তো সন্ত্রাসী হচ্ছে না। হচ্ছে না বাঁচোয়া । হওয়ার আশঙ্কা নেই, এ কথা কেউ হলফ করে আজ বলতে পারবে না। তারা হয়ত রিক্রুটারদের নজরে এখনও পড়েনি, হয়ত পড়বে। এক ক্লিক দূরত্বে এখন জঙ্গি হওয়ার আহবান, আইসিসের হাতছানি! এর মধ্যে দেশের দু’শ ছেলের খবর নেই। আমাদের সংসার থেকে মেধাবী,প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীরা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কি সচেতন হওয়ার সময় এখনো আসেনি?

তাহমিদ সাফি একজন শিক্ষিত যুবক, শিল্পী, শান্তিনিকেতনে গান শিখেছেন, গানও গাইতেন টেলিভিশনে, রবীন্দ্রসঙ্গীতে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন – এমন সময় তিনি ধর্মে আকৃষ্ট হলেন, দেশ ছাড়লেন—এখন সিরিয়ায় আইসিসের ঘাঁটি থেকে ভিডিওতে জানিয়েছেন, গণতন্ত্র মানেন না, আল্লাহর আইন কায়েম করবেন, তা না হলে সবাইকে খুন করবেন, মরতে হলে মরবেন। এত ঠান্ডা মাথায় এই বুদ্ধিদীপ্ত যুবক কী করে পারেন মানুষ মারার কথা বলতে! মানুষ মারায় কোনো বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় নির্বুদ্ধিতার, বর্বরতার! বেহেস্তের লোভ এদের বুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়! কী করে ঢাকা ক্যাফের ওই অল্প বয়সী ছেলেগুলো একের পর এক কুড়িজন জলজ্যান্ত মানুষকে জবাই করেছে! ধর্মে লেখা আছে বিধর্মীকে মারার কথা, সে কারণেই মেরেছে?ধর্মে তো আরো কত কথাই লেখা আছে! ‘ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই’ – কোরানের এই উপদেশটি কেন তারা গ্রহণ করে না? ছেলেদের কি এইটুকু বিচারবিবেচনা নেই—কী গ্রহণ করতে হয়, কী করতে হয় না?

রাজনীতিকরা ধর্মীয় মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস কেন করেন? কেন মসজিদ মাদ্রাসায় সন্ত্রাসের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে জেনেও তা রোধ করেন না, কেন ইস্কুল কলেজে এমন কী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মের মোহে পড়ে ছেলেমেয়েদের নষ্ট হয়ে যাওয়া থামাতে চেষ্টা করেন না, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ধর্মকে যখন ব্যবহার করেন তখন এইটুকু দূরদর্শিতা কি তাঁদের থাকে না যে এভাবে সমাজকে আরও তাঁরা হাজারবছর পিছিয়ে দিচ্ছেন, সন্ত্রাসীদের আস্তানা বাড়ছে, সন্ত্রাস বাড়ছে – সে কী আজ থেকে – এসবের বিরুদ্ধে কই কোনো তো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না? বরং ধর্ম ব্যবসায়ীদের সব সুযোগ সুবিধে দান করার প্রতিযোগিতা চলছে যেন, সমাজের বা মানুষের কোনো মঙ্গল কি রাজনীতিকরা আসলেই চান? দেখে শুনে আমার তো মনে হয় না তাঁরা দেশের কোনো ভাল চান।
ভারতীয় উপমহাদেশের আইসিস-বিরোধী মোল্লা-মওলানা কী করে অহঙ্কার করে বলেন যে কোরানের ব্যাখ্যা আইসিস বা দায়েসরা ভুল দেন কিন্তু তাঁরা ঠিক দেন? কোরান আরবিতে লেখা, আরবি যাঁদের মাতৃভাষা তাঁরা বুঝবেন না কোরানের সুরার অর্থ? তাঁদের চেয়ে বেশি বুঝবেন কোরান মুখস্ত করে অভ্যস্ত যাঁরা, বুঝে পড়ায় অভ্যস্ত নন যাঁরা, তাঁরা? কোরান মুখস্ত না করে বরং বুঝে পড়লে মানুষ জানবে কোরানে কী লেখা আছে। আইসিস যখন দাবি করছে কোরানে জিহাদের কথা আছে, জিহাদ মানে পবিত্র যুদ্ধ, অবিশ্বাসীদের মেরে ফেলতে হবে, গোটা দুনিয়ায় আর কারও নয় শুধু বিশ্বাসীদের জায়গা হবে --- তখন আইসিস-বিরোধী নরমপন্থী মুসলমানরা বলছেন ‘জিহাদ মানে আত্মশুদ্ধিকরণ, নিজের সঙ্গে নিজের সংগ্রাম’। কারা সত্যি বলছেন, কারা মিথ্যে বলছেন, জানার অধিকার নিশ্চয়ই সবার। কোরান বুঝে পড়লে আবার কিন্তু একটু মুশকিলও আছে, পড়ার পর কেউ কেউ দেখা যায় জঙ্গি হচ্ছে, কেউ নাস্তিক হচ্ছে। আর না বুঝে পড়লে নাকি, দুর্মুখরা বলে ‘মোডারেট মুসলমান’ বা ‘নরমপন্থী মুসলমান’ হয়। নরমপন্থী তারা যারা আমেরিকার দ্রোনে মুসলিম সন্ত্রাসীরা খুন হলে চিৎকার করে, ‘আমেরিকা মুসলমানদের মারছে’। আর ওই একই সন্ত্রাসী যখন নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করে, তখন বলে, ‘যারা খুন করেছে তারা মুসলমান নয়, তারা সন্ত্রাসী’।

মুসলমানদের তারা বন্ধু নয়, যারা মুসলমান সমাজকে সেখানেই রেখে দিতে চায়, যেখানে এবং যেভাবে এটি আছে। অমুসলিম হলেই সে মুসলমানের শত্রু তা ঠিক নয়। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু তারা, যারা বলছে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে মেয়েদের সমানাধিকার রয়েছে, ইসলাম কারো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, শরিয়া আইন এমন কোনো খারাপ আইন নয়’। ইসলামের শত্রুরা ইসলামের কোনো সমালোচনা শুনতে চায় না। তারা বদ্ধ জলাশয়েই চায় পড়ে থাকুক ধর্মটি। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষিত,আলোকিত, যুক্তিবাদি, বিবর্তনবাদি, অস্তিত্ববাদিদের মত প্রকাশের অধিকারে তারা বিশ্বাসী নয়। তারা মুসলমান সমাজের কোনো পরিবর্তন, বিবর্তন, কোনো বদল চায় না। প্রগতির পথে, সভ্যতা, সুস্থতা, এবং সমানাধিকারের পথে সন্ত্রাসীরা যত না বাধা, তারও চেয়ে বড় বাধা এই নরমপন্থী মুসলমানরা আর তাদের বন্ধুরা। এদের সংখ্যা সন্ত্রাসীদের চেয়ে বিপজ্জনকভাবে বেশি। এদের কারণেই জন্ম হচ্ছে সন্ত্রাসীদের।
বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিশ্ব কাঁপাতে চেয়েছিল, কাঁপিয়েছে। অমুসলমানদের খুন করে পুন্যি কামাতে চেয়েছিল, সম্ভবত তা-ও কামিয়েছে। এতগুলো মানুষকে অল্পবয়সি ছেলেগুলো কী করে পারল জবাই করতে! ওরা তো আগে কখনও জবাই করেনি। সত্যি কথা কী, বিশ্বাস মানুষকে দিয়ে অসম্ভব অসম্ভব কাজ…
ANANDABAZAR.COM|BY তসলিমা নাসরিন

No comments:

Post a Comment